ভারতের আয়বৈষম্যের কারণ

ভারতে আয়বৈষম্যের কারণগুলি আলোচনা করো

ভারতের আয়বৈষম্যের কারণ গুলি আলোচনা করো।

ভারতের আয়বৈষম্যের কারণগুলি হল নিম্নরূপ :

(১) মহাজনি শোষণ :

অত্যন্ত চড়া সুদ আদায় ও হিসাবের কারচুপিতে মহাজনরা গ্রামের গরিব ও মধ্যবিত্ত কৃষকশ্রেণির সম্পত্তি গ্রাস করে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধিতে ইন্ধন জুগিয়েছে।

(২) সামাজিক প্রথা :

অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ও জিন ড্রিন- এর মতে, বর্ণভেদ প্রথা, জাতিভেদ প্রথা, বাল্যবিবাহ প্রথা ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক প্রথা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য দায়ী।

(৩) সুযোগবৈষম্য :

সমাজে সকল শ্রেনির মানুষ সরকারি সুযোগসুবিধা, সংবাদ বা তথ্য পরিবেশনের অভাবে সমানভাবে গ্রহণের সুযোগ পায়না। ফলে বৈষম্য বাড়ে।

(৪) উত্তরাধিকার আইন :

আমাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন স্বীকৃত হওয়ায় পৈতৃক সম্পত্তি বংশ পরম্পরায় ভোগের অধিকার আয়বৈষম্য বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

(৫) তীব্র বেকারত্ব :

মহালানবিশ কমিটির মতে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বেকারত্ব বাড়ছে এবং বেকারত্ব আয়বৈষম্য বৃদ্ধির জন্য অনেকখানি দায়ী।

(৬) মুদ্রাস্ফীতির তীব্রতা :

ষাটের দশক মুদ্রাস্ফীতির প্রকোপ বৈষম্য বৃদ্ধির জন্য অনেকখানি দায়ী। কারণ ধনী ব্যক্তিদের আয়ের উৎস অনেক এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেশি। অপরদিকে, গরিবদের আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই, তাই তাদের ক্রয়ক্ষমতা নেই বললেই চলে।

(৭) কর ফাঁকি :

ভারতে আয়কর ও অন্যান্য শুল্কের হার খুব বেশি। ফলে কর ফাঁকির প্রবণতা বেশি। ধনী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সংস্থাগুলি কর ফাঁকি দিয়ে কালোটাকার পাহাড় তৈরি করেছে এবং আয়বৈষম্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে চলেছে।

(৮) প্রতিক্রিয়াশীল কর কাঠামো :

আমাদের দেশে রাজস্ব বৃদ্ধির অজুহাতে অধোগতিশীল পরোক্ষ করব্যবস্থা আয়বৈষম্যের অন্যতম কারণ।

(৯) আয় ও সম্পত্তি বণ্টন :

আয় ও সম্পত্তি বন্টনে সরকারি উদারীকরণ ও বিশ্বায়ন নীতি উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে করসংক্রান্ত নীতি, দায় নীতি, শিল্পনীতি, শিল্প লাইসেন্স নীতি, ঋণনীতি ইত্যাদি দেশের নীতি ধনী শ্রেণির স্বার্থের দিকে নজর রেখে স্থির করা হয়। সরকার এদের খুশি করে গদি টিকিয়ে রাখতে চায়। ফলে আয় ও সম্পত্তি বন্টনে বৈষম্য বাড়ে।

(১০) উদারীকরণ ও বিশ্বায়ন নীতি :

নব্বই-এর দশক থেকে ভারতের অর্থনীতিকে মিশ্রতন্ত্রের পরিবর্তে ধনতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চলছে। I.M.F., বিশ্বব্যাংক এবং W.T.O.-এর নির্দেশ মতো সরকারি ক্ষেত্রের সংকোচন করে বেসরকারি ক্ষেত্রের বিকাশের অপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিদেশী পুঁজি ও প্রযুক্তিকে প্রাধান্য প্রদান, বিলগ্নীকরণ ও বিরাষ্ট্রীকরণ নীতিকে কার্যকরী করে মূলত আয়-বৈষম্য হ্রাসের পরিবর্তে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধিই পাচ্ছে, বলাবাহুল্য।

Liked our post?

We are available with lots and lots of commerce related contents.

Follow us on Facebook and Youtube  

Related posts

One Thought to “ভারতের আয়বৈষম্যের কারণ”

Leave a Comment